রক্তদান একটি মহৎ কাজ যা অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। তবে রক্তদান সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল ধারণা ও কুসংস্কার রয়েছে যা অনেক সময় মানুষকে রক্তদান করতে বাধা দেয়। এই পৃষ্ঠায় রক্তদান সম্পর্কে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা এবং তাদের বৈজ্ঞানিক সত্যতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
"রক্তদান করা জীবন দান করার সমান। সত্য তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত নিন, ভুল ধারণা থেকে নয়।"
১. রক্তদান করলে দুর্বল হয়ে যাওয়া
ভুল ধারণা:
রক্তদান করলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে দুর্বলতা থাকে। অনেকে মনে করেন রক্তদানের পর কাজকর্ম করা কঠিন হবে এবং পুনরায় সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
সত্য তথ্য:
সাধারণ রক্তদানে মাত্র ৪৫০ মিলি (১ ইউনিট) রক্ত নেওয়া হয়, যা মোট রক্তের পরিমাণের (৫-৬ লিটার) ১০% এরও কম। শরীর অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এই পরিমাণ পুনরুদ্ধার করে নেয়:
- প্লাজমা (তরল অংশ) মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় তৈরি হয়ে যায়
- লাল রক্তকণিকা ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় তৈরি হয়ে যায়
- অধিকাংশ রক্তদাতা রক্তদানের ১-২ ঘণ্টার মধ্যেই স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারেন
সঠিক পুষ্টি ও পানি পান করলে রক্তদানের পর দুর্বলতা খুব কম সময়ের জন্য থাকে বা একেবারেই থাকে না।
২. রক্তদানে শরীরে রক্তের ঘাটতি হয়
ভুল ধারণা:
রক্তদান করলে শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যায় এবং এর ফলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে। অনেকে মনে করেন রক্তদানের ফলে তাদের রক্তের ঘাটতি দীর্ঘকাল থাকবে।
সত্য তথ্য:
রক্তদানের আগে প্রত্যেক রক্তদাতার হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা হয়। যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে (পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৩ g/dL এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২.৫ g/dL এর কম), তাহলে রক্তদান করতে দেওয়া হয় না। সুস্থ রক্তদাতার শরীর নিম্নলিখিত ভাবে প্রতিক্রিয়া করে:
- অস্থি মজ্জা দ্রুত নতুন রক্তকণিকা উৎপাদন শুরু করে
- রক্তদানের পর তিন দিনের মধ্যে ৭৫% কোষ প্রতিস্থাপিত হয়
- নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে শরীর সহজেই হিমোগ্লোবিন মাত্রা ঠিক রাখতে পারে
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রক্তদাতাদের মধ্যে অ্যানিমিয়ার হার সাধারণ মানুষের তুলনায় কম থাকে, কারণ তারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান এবং সচেতনভাবে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান।
৩. রক্তদান করলে বিভিন্ন রোগ সংক্রমিত হতে পারে
ভুল ধারণা:
রক্তদানের সময় ব্যবহৃত সুঁই বা সরঞ্জাম থেকে এইচআইভি, হেপাটাইটিস সি, বা অন্যান্য সংক্রামক রোগ হতে পারে। অনেকে এই ভয়ে রক্তদান করতে চান না।
সত্য তথ্য:
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে রক্তদান সম্পূর্ণ নিরাপদ। বাংলাদেশে সকল রক্তদান কেন্দ্রে অতি সতর্কতার সাথে নিম্নলিখিত নিয়ম মেনে চলা হয়:
- প্রতিটি রক্তদাতার জন্য নতুন, একবার ব্যবহারযোগ্য স্টেরাইল সুঁই ও ব্যাগ ব্যবহার করা হয়
- রক্তদানের আগে রক্তদাতার হাত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়
- সকল সরঞ্জাম সিলবন্ধ প্যাকেটে রাখা হয় এবং রক্তদাতার সামনে খোলা হয়
- প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান বা চিকিৎসকরা সতর্কতার সাথে প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সঠিক পদ্ধতিতে রক্তদান করলে কোনোভাবেই সংক্রামক রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই।
৪. রক্তদান করতে অনেক সময় লাগে
ভুল ধারণা:
রক্তদান একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া যা সারাদিন সময় নিতে পারে এবং কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে এতে অংশ নেওয়া কঠিন। এই ধারণা অনেককে রক্তদান থেকে বিরত রাখে।
সত্য তথ্য:
আসলে রক্তদান প্রক্রিয়া খুবই দ্রুত সম্পন্ন হয়:
- নিবন্ধন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ১০-১৫ মিনিট
- প্রকৃত রক্তদান প্রক্রিয়া: মাত্র ৮-১০ মিনিট
- রক্তদান পরবর্তী বিশ্রাম: ১০-১৫ মিনিট
পুরো প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। ব্লাডলি প্লাটফর্মে অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম রয়েছে যা অপেক্ষার সময় আরও কমিয়ে দেয়।
৫. রক্তদানে খুব বেশি ব্যথা হয়
ভুল ধারণা:
রক্তদান করা খুব বেদনাদায়ক, বিশেষ করে সুঁই ফোবিয়া বা সুঁই ভীতি আছে এমন মানুষদের কাছে এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
সত্য তথ্য:
রক্তদানে খুবই সামান্য ব্যথা হয়, যা অধিকাংশ লোক সহজেই সহ্য করতে পারেন:
- আধুনিক সুঁইগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও ধারালো হওয়ায় ন্যূনতম অস্বস্তি হয়
- সুঁই ঢোকানোর আগে ত্বক পরিষ্কার করা হয় যা ঠান্ডা অনুভূতি দেয় এবং সামান্য অসাড়তা তৈরি করে
- অধিকাংশ রক্তদাতা বলেন যে শুধুমাত্র সুঁই ঢোকানোর সময় সামান্য চিমটির মতো ব্যথা হয়
- সুঁই ঢোকানোর পর আর কোনো ব্যথা থাকে না
সুঁই ভীতি থাকলেও, প্রশিক্ষিত কর্মীরা সাহায্য করেন এবং দৃষ্টি অন্যদিকে রেখে ধ্যান করার পরামর্শ দেন, যা প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে তোলে।
৬. রক্তদান করলে ওজন বাড়ে/কমে
ভুল ধারণা:
কিছু মানুষ মনে করেন রক্তদান করলে ওজন বাড়ে, আবার কেউ কেউ মনে করেন ওজন কমে। বিশেষ করে ওজন নিয়ে সচেতন ব্যক্তিরা এই কারণে রক্তদান করতে দ্বিধা করেন।
সত্য তথ্য:
রক্তদান ওজন বাড়া বা কমার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়:
- রক্তদানে প্রায় ৪৫০ মিলি রক্ত বের হয়, যার ওজন মাত্র প্রায় ৫০০ গ্রাম (আধা কেজি)
- শরীর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই তরল পুনরুদ্ধার করে নেয়
- রক্তদানে প্রায় ৬৫০ ক্যালোরি ব্যয় হয়, তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী ওজন কমানোর পদ্ধতি নয়
- রক্তদানের পর অতিরিক্ত খাবার খেলে ওজন বাড়তে পারে, তবে এটি রক্তদানের সরাসরি প্রভাব নয়
গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিকভাবে পরিচালিত রক্তদান প্রোগ্রামে নিয়মিত রক্তদাতাদের ওজন স্থিতিশীল থাকে।
৭. রক্তদানের জন্য অনেক শারীরিক যোগ্যতা প্রয়োজন
ভুল ধারণা:
কেবল অত্যন্ত সুস্থ, সবল ও ক্রীড়াবিদরাই রক্তদান করতে পারেন। সাধারণ মানুষ যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তারা রক্তদানের উপযুক্ত নন।
সত্য তথ্য:
সাধারণ সুস্থতা ছাড়া রক্তদানের জন্য কোনো বিশেষ শারীরিক যোগ্যতা বা ফিটনেস প্রয়োজন হয় না:
- ১৮-৬০ বছর বয়সী যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি রক্তদান করতে পারেন
- ন্যূনতম ওজন ৫০ কেজি হলেই চলে
- সাধারণ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন এমন যেকোনো ব্যক্তি রক্তদান করতে পারেন
- বিশেষ ব্যায়াম বা শারীরিক শক্তি প্রয়োজন হয় না
শুধু সাধারণ সুস্থতা, সঠিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ন্যূনতম হিমোগ্লোবিন মাত্রা থাকলেই আপনি রক্তদানের যোগ্য।
৮. যারা ধূমপায়ী বা অ্যালকোহল পান করেন তারা রক্তদান করতে পারেন না
ভুল ধারণা:
ধূমপায়ী বা যারা মাঝে মধ্যে অ্যালকোহল পান করেন তারা রক্তদানের যোগ্য নন, কারণ তাদের রক্ত দূষিত বা কম মানের।
সত্য তথ্য:
ধূমপায়ী বা অ্যালকোহল পান করেন এমন ব্যক্তিরাও রক্তদান করতে পারেন, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:
- রক্তদানের ২৪ ঘণ্টা আগে অ্যালকোহল পান না করার পরামর্শ দেওয়া হয়
- রক্তদানের কয়েক ঘণ্টা আগে ও পরে ধূমপান না করাই ভালো
- দীর্ঘকালীন অ্যালকোহল সেবনের ফলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে রক্তদানের যোগ্যতা প্রভাবিত হতে পারে
- অতিরিক্ত ধূমপান হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমাতে পারে, তবে যদি তা স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে তবে রক্তদান করা যায়
নিকোটিন এবং অ্যালকোহল রক্ত থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়, তাই সঠিক সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করলে রক্তদান করা সম্ভব।
৯. মহিলারা রক্তদান করতে পারেন না বা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
ভুল ধারণা:
কিছু সমাজে বিশ্বাস করা হয় যে মহিলাদের শরীর রক্তদানের জন্য উপযুক্ত নয় বা তাদের জন্য রক্তদান বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে মাসিকের সময় রক্তদান করা মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সত্য তথ্য:
মহিলারাও পুরুষদের মতোই নিরাপদে রক্তদান করতে পারেন:
- মহিলাদের শরীর পুরুষদের মতোই দক্ষতার সাথে রক্ত পুনরুৎপাদন করতে পারে
- গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালীন সময় ছাড়া যেকোনো সময় রক্তদান করা যায়
- মাসিকের সময় রক্তদান করাও নিরাপদ, তবে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করা ভালো
- মহিলাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পুরুষদের তুলনায় সামান্য কম থাকে, তাই রক্তদানের আগে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা হয়
সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করলে মহিলারাও নিয়মিত (প্রতি ৩-৪ মাসে একবার) রক্তদান করতে পারেন।
১০. প্রচুর ওষুধ খেলে রক্তদান করা যায় না
ভুল ধারণা:
যারা নিয়মিত কোনো ওষুধ সেবন করেন তারা কখনোই রক্তদান করতে পারবেন না। অনেকে এই ধারণা পোষণ করেন যে যেকোনো ওষুধ সেবন করলেই রক্তদান করা যাবে না।
সত্য তথ্য:
অধিকাংশ সাধারণ ওষুধ সেবন করলেও রক্তদান করা যায়:
- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, অ্যালার্জি ইত্যাদির নিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন করলেও রক্তদান করা যায়
- কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ যেমন: ফিনাস্টেরাইড, আইসোট্রেটিনয়েন, অ্যাসিট্রেটিন, এবং এন্টিকোয়াগুলেন্ট ওষুধ সেবন করলে রক্তদান করা যায় না
- অ্যান্টিবায়োটিক চলাকালীন সময়ে এবং সম্পূর্ণ সেরে যাওয়ার ১-২ সপ্তাহ পর্যন্ত রক্তদান করা যায় না
- সঠিক তথ্য জানতে রক্তদানের আগে আপনার ওষুধের তালিকা চিকিৎসককে দেখানো উচিত
বিভিন্ন ওষুধের ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা হতে পারে, তাই রক্তদানের আগে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিন।
১১. রক্তদান করলে বার বার করতেই হবে
ভুল ধারণা:
একবার রক্তদান শুরু করলে, আপনাকে নিয়মিত বার বার রক্তদান করতেই হবে, অন্যথায় শরীরে সমস্যা হবে। অনেকে এই কারণে প্রথমবার রক্তদানে দ্বিধা করেন।
সত্য তথ্য:
একবার রক্তদান করলে আপনার শরীর এমন কোনো অভ্যাস তৈরি করে না যা বার বার রক্তদানের প্রয়োজন করে:
- রক্তদান সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক, আপনি যখন চান তখন করতে পারেন এবং যখন চান তখন থামাতে পারেন
- একবার রক্তদান করে থামালে কোনো শারীরিক সমস্যা হয় না
- নিয়মিত রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়
- আপনি নিজের সুবিধা অনুযায়ী রক্তদানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন
রক্তদান একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ এবং আপনি যতবার রক্তদান করবেন ততবারই একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবেন।
১২. যাদের রোগ আছে তাদের রক্ত নিয়ে রোগ ছড়ায়
ভুল ধারণা:
অনেকে ভয় পান যে রক্ত নেওয়ার ফলে রক্তদাতার সমস্ত রোগ বা অসুস্থতা রক্ত গ্রহীতার শরীরে চলে যাবে।
সত্য তথ্য:
রক্তদানের আগে প্রতিটি রক্তদাতা কঠোর স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান এবং সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষা করা হয়:
- প্রতিটি ইউনিট রক্ত এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস এবং অন্যান্য সংক্রমণের জন্য পরীক্ষা করা হয়
- যেসব রোগ রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় না (যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ) সেসব রোগের রোগীর রক্ত নেওয়া হলে তা ছড়ায় না
- যেসব রোগ রক্তের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, সেসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ত নেওয়া হয় না
- রক্ত সংগ্রহের পর এটি সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং পরীক্ষার কঠোর মান অনুসরণ করা হয়
আধুনিক রক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি এতটাই উন্নত যে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি প্রায় শূন্য।
১৩. নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপের ব্যক্তিরাই শুধু রক্তদান করতে পারেন
ভুল ধারণা:
শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু রক্তের গ্রুপের মানুষেরা (যেমন O- বা O+) রক্তদান করতে পারেন। অন্য রক্তের গ্রুপের মানুষদের রক্তের প্রয়োজন কম।
সত্য তথ্য:
সব রক্তের গ্রুপের মানুষের রক্তেরই প্রয়োজন রয়েছে:
- O- (নেগেটিভ) রক্তের গ্রুপকে সাধারণত "সার্বজনীন দাতা" হিসেবে উল্লেখ করা হয় কারণ যে কোনো রক্তের গ্রুপের রোগী এটি গ্রহণ করতে পারেন
- AB+ (পজিটিভ) রক্তের গ্রুপকে "সার্বজনীন গ্রহীতা" বলা হয় কারণ তারা যে কোনো রক্তের গ্রুপ গ্রহণ করতে পারেন
- প্রতিটি রক্তের গ্রুপের লোকেরাই রক্তদান করতে পারেন এবং প্রত্যেকের রক্তেরই প্রয়োজন আছে
- প্রতিটি রক্তের গ্রুপের জন্য সবসময় চাহিদা থাকে, কারণ রক্ত সাধারণত একই রক্তের গ্রুপের রোগীদের দেওয়া হয়
সব রক্তের গ্রুপের মানুষদের রক্তদান করা উচিত, কারণ রক্তের চাহিদা সবসময়ই থাকে এবং প্রায়শই বিশেষ রক্তের গ্রুপের আকস্মিক চাহিদা দেখা দেয়।
১৪. দুর্বল বা রোগা মানুষেরা রক্তদান করতে পারেন না
ভুল ধারণা:
শুধুমাত্র স্থূলকায় বা শক্তিশালী লোকেরাই রক্তদান করতে পারেন। যারা সাধারণ গঠনের বা পাতলা তারা রক্তদান করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
সত্য তথ্য:
শারীরিক গঠন নয়, স্বাস্থ্যের মান এবং ওজন রক্তদানের যোগ্যতা নির্ধারণ করে:
- ন্যূনতম ওজন ৫০ কেজি হলে যেকেউ রক্তদান করতে পারেন
- শারীরিক গঠন নয়, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক পুষ্টি সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ
- নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করেন এমন সাধারণ গঠনের ব্যক্তিরা অনায়াসে রক্তদান করতে পারেন
সঠিক স্বাস্থ্য মূল্যায়নের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় যে আপনি রক্তদানের জন্য যোগ্য কিনা। শারীরিক গঠন নয়, আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যই মূল বিবেচ্য বিষয়।
১৫. রক্তদানের ফলে ত্বক ফর্সা হয়
ভুল ধারণা:
কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস করা হয় যে রক্তদান করলে ত্বকের রং ফর্সা হয় বা রক্ত পরিষ্কার হয়। এই কারণে অনেকে শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রক্তদান করতে যান।
সত্য তথ্য:
রক্তদানের সাথে ত্বকের রং বা গায়ের বর্ণের কোনো সম্পর্ক নেই:
- ত্বকের রং জেনেটিক ফ্যাক্টর, মেলানিন এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে
- রক্তদান ত্বকের রঙের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না
- রক্তদান করলে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য উপকারী, কিন্তু এর ফলে ত্বকের রং পরিবর্তন হয় না
- ত্বকের সৌন্দর্য সঠিক পুষ্টি, জলপান, ও ত্বকের যত্নের উপর নির্ভর করে
রক্তদানের উদ্দেশ্য মানুষের জীবন বাঁচানো, এটি শারীরিক সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নয়। এটি একটি মহৎ কাজ যা মানবতার সেবায় করা হয়।
রক্তদান সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা থাকলেও, এটি একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও মহৎ কাজ। বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক তথ্য জেনে রক্তদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। একজন সুস্থ ব্যক্তি বছরে ৩-৪ বার রক্তদান করে চারটি পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে পারেন।
আসুন রক্তদানের মাধ্যমে জীবন বাঁচাই
ব্লাডলি প্লাটফর্মে যোগ দিন এবং নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে মানবসেবায় অংশগ্রহণ করুন। আপনার রক্তদান একটি মূল্যবান উপহার যা কারো জীবন বাঁচাতে পারে।
তথ্যসূত্র
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) - বিশ্ব রক্তদাতা দিবস
- ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিল, বাংলাদেশ
- আমেরিকান রেড ক্রস - রক্তদান প্রক্রিয়া
- ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন (ISBT)
- জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা, বাংলাদেশ সরকার